সপ্তাহব্যাপী চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার ঐতিহ্যবাহী জাফরাবাদ জামিয়া আরাবিয়া এমদাদিয়া (দাওরায়ে হাদীস) মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিংয়ের ৫শতাধিক শিক্ষার্থীরা একজন মাদ্রাসা শিক্ষককে চাকরীচ্যুত, অধ্যক্ষের অপসারণের (মুহতামিম) দাবীতে ব্যাপক বিক্ষোভ, ভাংচুর ও প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে ব্যর্থ হয়ে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন।
শনিবার (২১ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, ভাংচুর, বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে ও প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। তারা এ মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মনসুর আহমেদকে পুর্নবহালের দাবি, ও মাদ্রাসার মুহতামিম জাফর আহম্মেদকে অপসারনের দাবী জানান।
যার ফলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে পর্যালোচনার জন্য শনিবার দুপুরে বেঙ্গল স্টিল ও বিক্রমপুর স্টিলের মালিক মাদ্রাসা সভাপতি মো: হারুন-অর-রশিদ শেখকে ঢাকা থেকে খবর দিয়ে এনে ও মাদ্রাসার অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়ে সমাধানের লক্ষ্যে বসেন।
এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের উত্তেজনার প্রেক্ষিতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসায় সমাবেশ না করে মাদ্রাসার সভাপতির বাড়িতে গিয়ে বসে ব্যাপক আলোচনার পর এক সিদ্বান্তে উপনীত হন। পরে মাদ্রাসার সভাপতিসহ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ শেষ বিকেলে মাদ্রাসায় আসেন শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানানোর জন্য।
এরই মধ্যে মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক ও কিছু বহিরাগত লোকের ইন্ধনে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সভাপতির উপস্থিতে মাদ্রাসার মসজিদের দরজা ও জানালা ভাংচুরের জন্য চেস্টা চালায় এবং বিভিন্ন উচছকানি মূলক শ্লোগান দিতে থাকে,শিক্ষার্থীরা সভাপতি গাড়ী ভাংচুর করার জন্য যখন এগিয়ে আসার উপক্রম হয়ে উঠে। যার ফলে মাদ্রাসার সভাপতি মো: হারুন শেখ ও অন্য কর্মকর্তারা পরিস্থিতি ঘোলাটে দেখে মাদ্রাসা প্রাঙ্গন ত্যাগ করে চলে যান।
পরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এক হয়ে মাদ্রাসার সহ-সভাপতি মো: বিল্লাল পাটওয়ারীর মাধ্যমে মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে সন্ধ্যায় শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা শিক্ষক, এলাকাবাসী, সাংবাদিক ও প্রশাসনের উপস্থিতে এক ঘোষনার মাধ্যমে মাদ্রাটির শিক্ষা কার্যক্রমসহ সকল কার্যক্রম অনিদিস্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নাসিম উদ্দিন, ওসি তদন্ত হারুনুর রশিদ, পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো: জাহাঙ্গীর আলম, বেগম ইন্ডাষ্টির পরিচালক হাবিবুর রহমান, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি হাজী বিল্লাল পাটওয়ারি, কোষাধ্যক্ষ হাজী আবুল কাসেম গাজী, গণ্যমান্য ব্যক্তির মধ্যে আরশাদ মিজি, গাজী মোঃ হাসান, হারুন খা, নিলু হাওলাদার প্রমূখ।
প্রসঙ্গগত, চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার ঐতিহ্যবাহী জাফরাবাদ জামিয়া আরাবিয়া এমদাদিয়াা (দাওরায়ে হাদীস) মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিংয়ের কয়েক শত শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসা শিক্ষককে চাকরীচ্যুত, অধ্যক্ষের অপসারন, বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদে গত এক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও মাদ্রাসায় প্রায় ৩ ঘন্টা মুহতামিমকে অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে তারা মোহতামের অফিস কক্ষে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুরও চালায় এবং পুরনো শিক্ষক হাফেজ মনসুর সাহেবকে পুর্নবহালেরও দাবি জানান।
এ ঘটনায় পরিস্থিতি শান্ত ও নিয়ন্ত্রনে আনতে প্রশাসন ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহন করেছে এবং ঘটনাস্থলে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে দফায় দফায় সমজোতার চেস্টা চলছে বলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো: নাসিম উদ্দিন জানান।
গত বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার মুহতামিম জাফর আহম্মেদ ও শিক্ষা সচিব মুফতি মাসুম বিল্লাহকে বহিস্কারসহ ৬ দফা দাবী নিয়ে এ আন্দোলন করেন।