সম্প্রতি অনলাইন পোর্টাল ও দু’একটি পত্রিকায় পাবনার চাটমোহর উপজেলার ৪৭টি দুর্গাপূজা মন্দিরের নামে সরকারি বরাদ্দকৃত (মন্দির প্রতি ৫০০ কেজি) চাউল বিক্রির টাকা থেকে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ কর্তৃক মন্দির প্রতি ১৩ শ’ টাকা হারে কেটে রাখা সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে ২৩ অক্টোবর শুক্রবার বেলা ১১টায় স্থানীয় কর্মকারপাড়াস্থ রাধাবল্লভ মন্দিরের অফিস কক্ষে চাটমোহর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সহকারি অধ্যাপক অশোক চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রবীর দত্ত চৈতন্য।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়- “বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চাটমোহর উপজেলা ও পৌর শাখা চাটমোহরের আপামর হিন্দু জনসাধারণের ব্যক্তিগত পর্যায়ের এবং বিভিন্ন মঠ, মন্দির, শ্মশানের নানাবিধ সমস্যা নিরালসভাবে সমাধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সেহেতু এ সকল কার্যাদি সম্পাদন যেমন- জন্মষ্টমী উৎসব, পরিষদের সভা ও আপ্যায়ন, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দিবস, বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের প্রয়ান দিবস বা স্মরণ সভা উদযাপিত সহ নানাবিধ কার্য সম্পাদন করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। যা আমরা চাটমোহরের ভক্তবৃন্দ, সম্মানিত দাতাগণ এবং প্রত্যেকটি দুর্গাপূজা মন্ডপ কমিটির নেতৃবৃন্দ প্রতি বছর কিছু কিছু করে অনুদান প্রদান করে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও প্রতিটি পূজা মন্ডপ ১৩ শ’ টাকা করে অনুদান প্রদান করেছেন। যা চাটমোহর পূজা উদযাপন পরিষদের কোষাগারে গচ্ছিত রয়েছে।”
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয় যে, “অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু জনবিচ্ছিন্ন কুচক্রীমহল এবারের চাউল বিক্রির টাকা হতে ১৩ শ’ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে বলে কিছু কিছু সাংবাদিকের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করেন। যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। সেই সাথে আমাদের পাবনা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দকেও এই মিথ্যা তথ্য দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেন, যা অত্যন্ত দু:খজনক ও সম্মানহানীকর। আমরা উক্ত অভিযোগের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিভ্রান্তকর পরিস্থিতি পরবর্তীতে আমরা জেলা কমিটির নির্দেশে প্রতিটি মন্ডপ কমিটিকে জানিয়ে দেই আপনারা যারা অনুদান প্রদান করেছেন পরিষদকে। সেই অনুদান আপনারা পূনরায় ফেরত নিয়ে যান। এতে করে মোট ৯টি মন্ডপ কমিটি অনুদানের টাকা ফেরত নিয়ে গেছেন। অবশিষ্ট ৩৮টি মন্ডপের অনুদানের টাকা ফেরত না নিয়ে বরং তারা সংগঠন পরিচালনার জন্য অনুদান প্রদান করেছেন মর্মে জানিয়ে দিয়েছেন।”
উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রবীর দত্ত চৈতন্য জানান, “পৃথকভাবে সরকারি অনুদানের চাউল বিক্রি করা হলে সঠিকমূল্য না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সকল চাউল আমরা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রতি মন্ডপের অনুকূলে প্রাপ্ত ৫০০ কেজি চাউল সর্বোচ্চমূল্যে ১৯ হাজার টাকা করে বিক্রি করতে সক্ষম হই। পরবর্তীতে প্রতিটি মন্ডপের পক্ষ থেকে সংগঠন পরিচালনার জন্য ১৩ শ’ টাকা করে উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির তহবিলে অনুদান প্রদান করা হয়। অনুদান হিসেবে প্রাপ্ত সমূদয় টাকা সংগঠনের তহবিলে গচ্ছিত রয়েছে। কোনো মন্ডপ কমিটি অনুদানের টাকা চাহিবামাত্র ফেরত দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।”
সম্পূরক এক প্রশ্নের জবাবে হান্ডিয়াল ইউনিয়ন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী দিলীপ ব্রহ্মচারী বলেন, “বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্তত: ২৫/৩০টি মন্ডপ কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করে সংগঠন পরিচালনার জন্য প্রতিটি মন্ডপের অনুকূলে প্রাপ্ত সরকারি অনুদানের অর্থ থেকে ১৩ শ’ টাকা করে প্রদানের জন্য সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আমরা সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের হতবিলে ১৩ শ’ টাকা করে অনুদান প্রদান করি।” অপরএক প্রশ্নের জবাবে নতুন বাজার হরি মন্দির কমিটির সভাপতি সহকারি অধ্যাপক শ্রী অনুপ কুমার কুন্ডু বলেন, “আমাদের সম্মতি সাপেক্ষে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ একত্রে চাউল বিক্রির টাকা থেকে ১৩ শ’ টাকা কেটে রাখে। পরবর্তীতে জেলা কমিটির নির্দেশে আমাদের মন্দির থেকে দেয়া অনুদানের ১৩ শ’ টাকা আমাদের আপত্তি সত্বেও ফেরত দেওয়া হয়।”
জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি জয়দেব কুন্ডু গনো, সাংগঠনিক সম্পাদক কিংকর সাহা, পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী শম্ভুনাথ কুন্ডু, সাধারণ সম্পাদক শ্রী তরুন কুমার পাল সহ উপজেলা কমিটি, পৌর কমিটি, বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটি ও বিভিন্ন পূজা মন্ডপ কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।