বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবদের বৈঠক শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে। এতে দুই দেশের মধ্যে পানিসম্পদ খাতে বিদ্যমান সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হবে। এর পর দুই দেশের পানিসম্পদমন্ত্রী পর্যায়ে ‘জয়েন্ট রিভার কমিশন’ (জেআরসি) বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই করার লক্ষ্যে মন্ত্রী পর্যায়ে জেআরসি বৈঠক করার বিষয়ে বাংলাদেশ আগ্রহী। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী থাকলেও শুধু গঙ্গার পানিবণ্টনে চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশে ভারতের নতুন হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বুধবার সচিবালয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে আলোচনায় সচিব পর্যায়ে বৈঠকের বিষয়ে ঐকমত্য হলেও বৈঠকের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
জানতে চাইলে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রথম মিটিং। তাই পয়েন্ট ওয়ান, পয়েন্ট টু এভাবে ধরে ধরে কঠিন আলোচনা করতে চাইনি। তিনি (বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী) আমাকে বলেছেন, তার বাবা এয়ারফোর্সের লোক ছিলেন । আমারও ব্যাকগ্রাউন্ড সামরিক। আমাদের মধ্যে একটা ফ্রেন্ডলি আলোচনা হয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আলোচনার একপর্যায়ে ভারতের হাইকমিশনার নিজে থেকে পানি সচিব পর্যায়ে বৈঠক করার প্রস্তাব করেছেন। আমাদের মধ্যে ছোটখাটো ৪-৫টা সমস্যা আছে। এগুলোর সমাধান হোক আগে। তার পর জেআরসি বৈঠক করা যাবে’।
পানি প্রতিমন্ত্রী আরও জানান যে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ে ২০১৯ সালে ঢাকায় বৈঠক হয়েছিল। তাই রিটার্ন ভিজিটের জন্য সচিব ভারত যাবেন কিংবা জুমে বৈঠক করবেন ।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সেপ্টেম্বরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ২৯ সেপ্টেম্বর ২৮ দফার একটি যৌৗথ বিবৃতি দেয় ঢাকা ও দিল্লি। এতে উল্লেখ করা হয় যে, দুই মন্ত্রী তিস্তার অন্তর্বর্তী চুক্তি চূড়ান্ত করতে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এ ছাড়া অন্য ছয়টি নদী মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধ কুমার নদীর অর্ন্তবর্তী চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রতি গুরুত্ব অারোপ করেন । মন্ত্রী পর্যায়ে জেঅারসি বৈঠক বিবেচনার অাহ্বান জানান দুই মন্ত্রী ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডিসেম্বরে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন। আগামী বছরের মার্চে মোদি বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির খসড়া ২০১১ সালে চূড়ান্ত করা হয়। খসড়া মোতাবেক, তিস্তার পানি উভয় দেশ সমান সমান পাওয়ার কথা ছিল। ওই বছরে ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফর করেন। ওই সফরে চুক্তিটি সই করার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আপত্তি করেন। তিনি নিজেকে মনমোহন সিংয়ের সফরসঙ্গীর তালিকা থেকে প্রত্যাহার করে নেন। ফলে ওই সময়ে বহুল প্রত্যাশিত চুক্তিটি সই হয়নি। তার পর বিভিন্ন সময়ে ভারত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আর বাস্তবায়ন হয়নি ।