কোভিড-১৯ এ কেরলে সরকারী হিসাবের ‘দ্বিগুণ’ মৃত্যু হয়েছে। ভারতে করোনা সংক্রমণ ৯০ লাখ ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) পরামর্শ দিয়েছে রেমডিসিভির ব্যবহার বন্ধ করতে। ইউরোপে প্রতি ১৭ সেকেন্ডে মারা যাচ্ছে একজন করে। কোনভাবেই করোনার লাগাম টানতে পারছে না ইউরোপ। এছাড়া বিশ্বে করোনা আক্রান্তের মাত্র ৪ শতাংশ আফ্রিকার। যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড মৃত্যু হয়েছে। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স ও ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের।
বিশ্বজুড়ে শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৬২ হাজার ২৪০ জন। মারা গেছেন ১৩ লাখ ৭২ হাজার ৬৬১ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৭৮ হাজার ৮৬৩ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন এক কোটি ৬১ লাখ ৫২ হাজার ৮৩১ জন। যাদের মধ্যে এক লাখ এক হাজার ৮৮৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৬ লাখ ৫০ হাজার ৪৪২ জন। একদিনে মারা গেছেন ১০ হাজার ৭৭৬ জন। এদিকে গত মার্চ থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দল ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কেরলের স্থানীয় পত্রিকা ও নিউজ চ্যানেলে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর খবর এবং প্রশাসন থেকে ওই সময়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর এক তালিকা তৈরি করেছে। আর তাতেই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যার সঙ্গে সরকারী হিসাবে বড় ধরনের পার্থক্য উঠে আসে। ডাঃ অরুণ মাধভন নামে এক চিকিৎসক ওই স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা গত মার্চ থেকে প্রতিদিন স্থানীয় সাত পত্রিকার স্থানীয় সংস্করণ এবং পাঁচটি নিউজ চ্যানেলের খবর দেখে সেখান থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন। তারা এ সময়ে মারা গেছেন এমন সব ব্যক্তি এবং রাজ্যে কোভিড-১৯ মৃত্যুর দৈনিক তালিকাও পরীক্ষা করেন। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেরলে বুধবার রাত পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে তিন হাজার ৩২০ জন মারা গেছেন। অথচ সরকারী হিসাব মতে, সেখানে মোট মৃত্যু এক হাজার ৯৪২ জন। গত জানুয়ারিতে কেরলে প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। প্রথম মৃত্যু হয় মার্চে। এ নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোর গবেষক প্রভাত ঝা বলেন, এটা কোন কিছু গণনার খুবই কার্যকর পদ্ধতি। প্রভাত ঝার নেতৃত্বেই ভারতের ‘মিলিয়ন ডেথ স্টাডি’ চলছে। এটি বিশ্বে অকাল মৃত্যু নিয়ে হওয়া গবেষণাগুলোর অন্যতম। ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ হাজার ৮৮২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯০ লাখ চার হাজার ৩৬৫। এখন পর্যন্ত ৮৪ লাখ ২৮ জন করোনায় সংক্রমিত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ এর মধ্য দিয়ে সেখানে সুস্থ হওয়ার হার দাঁড়িয়েছে ৯৩ দশমিক ৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে এক লাখ ৩২ হাজার ১৬২ জন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে মহারাষ্ট্রে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ লাখ ৬৩ হাজার ৫৫ জন। বৃহস্পতিবার নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৫৩৫ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৫৪ জন।
ডব্লিউএইচওর পরামর্শ ॥ রেমডিসিভির ব্যবহারে রোগীর শারীরিক অবস্থার কোন উন্নতি, মৃত্যুর ঝুঁকি কমা বা তার ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন না হওয়ার কোন প্রমাণ এখন পর্যন্ত না পাওয়ায় কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় এর ব্যবহার বন্ধের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্যানেল থেকে এ পরামর্শ দেয়া হয়। তাদের দিকনির্দেশনায় বলা হয়, ডব্লিউএইচওর প্যানেল রেমডেসিভির ব্যবহারে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি কমা, ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হ্রাস, চিকিৎসায় দ্রুত সুস্থ হওয়া বা এ সংক্রান্ত কোন সুবিধা হওয়ার যথেষ্ট প্রমাণ পায়নি। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় সম্প্রতি যে দুটি ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে, রেমডেসিভির তার একটি। কিন্তু গত মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের গিলিয়াড সায়েন্সেস ইনকর্পোরেশন উৎপাদিত রেমডেসিভিরের প্রভাব নিয়ে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বিষয়ে নিজেদের অভিমত প্রকাশ করে। সেখানে সংস্থাটির গবেষকরা জানান, তাদের গবেষণায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের হাসপাতালে অবস্থানের সময় কমানো বা মৃত্যু ঠেকাতে ওষুধগুলো সামান্যই প্রভাব রেখেছে বা কোন প্রভাবই ফেলতে পারেনি। বিশ্বের ৩০টির বেশি দেশের ১১ হাজার ২৬৬ রোগীর ওপর ওই ট্রায়াল চালানো হয়েছে। ওই ট্রায়ালে রেমডেসিভির ছাড়াও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, এইডস নিরোধী লোপিনাভির/রিটোনাভির এবং ইন্টারফেরনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়।
প্রতি ১৭ সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু ॥ ইউরোপীয় দেশগুলোতে আবারও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ইউরোপের দেশগুলোতে প্রতি ১৭ সেকেন্ডে একজন করে মারা যাচ্ছে। ডব্লিউএইচও বলেছে, আগামী ছয় মাস ইউরোপীয় দেশগুলোকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সংস্থার ইউরোপীয় অঞ্চলের পরিচালক হ্যান্স ক্লুগ ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন। সতর্কবাণী উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ইউরোপে গত এক সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৯ হাজার মানুষ মারা গেছে। হিসাব করে দেখা গেছে, প্রতি ১৭ সেকেন্ডে করোনায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হচ্ছে।
লাগাম টানতে পারছে না ইউরোপ ॥ লকডাউন আর কার্ফু ছাড়াও অন্যান্য বিধিনিষেধ জারির পরও কোনভাবে নিয়ন্ত্রণে আসছে না ইউরোপের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি। প্রতিনিয়ত অঞ্চলটির বিভিন্ন দেশে বেড়েই চলছে মহামারী এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। একই সঙ্গে প্রতিনিয়ত সমানুপাতিক হারে বাড়ছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানিও। গত ৩১ জানুয়ারি ইতালির রাজধানী রোমে দুই চীনা পর্যটকের শরীরে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত হয়। যদিও অনেকের মতে ইউরোপে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২১ জানুয়ারি; ফ্রান্সের বোর্দো নামক স্থানে। এর দেড় মাস ১৭ মার্চের মধ্যে ইউরোপের প্রায় সবদেশে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনার প্রকোপ।
মাত্র ৪ শতাংশ আফ্রিকার ॥ দ্বিতীয় দফায় বিশ্বজুড়ে করোনার যে উর্ধমুখী সংক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে; প্রথম দফার মতো এবারও আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন তুলনামূলক কম মানুষ। আফ্রিকার আঞ্চলিক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পুরো আফ্রিকায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বিশ লাখ ছাড়িয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) স্বাস্থ্য বিষয়ক এই সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ১৩ হাজার ৩৮৮ জন। সেই হিসাবে বিশ্বে এখন পর্যন্ত মোট কোভিড-১৯ সংক্রমিত মানুষের মাত্র চার শতাংশ আফ্রিকার। অথচ আফ্রিকায় কয়েক কোটি আক্রান্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড মৃত্যু ॥ যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত এক কোটি ২০ লাখ ৭০ হাজার ৭১২ জন আক্রান্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন এক লাখ ৯২ হাজার ১৮৬ জন। একদিনে মারা গেছেন দুই হাজার ৬৫ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন দুই লাখ ৫৮ হাজার ৩৩৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ৭২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮৮ জন। এখনও চিকিৎসাধীন আছেন ৪৫ লাখ ৬৮ হাজার ৮৯১ জন। যাদের মধ্যে ২২ হাজার ৪৬৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।